Tuesday, November 26, 2013

কপ-১৯ বাংলাদেশ নিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ গোলাম মোর্তোজা

(কপ 19 : ওয়ারশ ' দেখা বাংলদেশের প্রতিনিধি দলের কর্মকান্ড নিয়ে সাপ্তাহিক - এর বর্তমান সংখ্যার লেখা এই সংখ্যাটি আজ থেকে বাজারে পাওয়া যাবে হ্যাক এবং কিছু কাজ চলায় সাপ্তাহিক - এর ওয়েবসাইট সাময়িকভাবে বন্ধ আছে)


দেশের রাজনীতিতে যখন চরম অরাজকতা- তখন পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে চলছিল আরেক অস্থিরতা এই অস্থিরতার সঙ্গেও বাংলাদেশ জড়িত, বাংলাদেশের জনমানুষের ভাগ্য জড়িত কিছু অর্থপ্রাপ্তির ভাসা ভাসা আশ্বাস ছাড়া শেষ পর্যন্ত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের এই আয়োজন থেকে তেমন কোনো প্রাপ্তি হলো না আগামী বছর পেরুর রাজধানী লিমাতেও এই ধারাবাহিকতায়ই আলোচনা হবে একটি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা আছে ২০১৫ সালে প্যারিসে এবারের আসরের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন একশন এইড বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ সে কারণে জলবায়ু সম্মেলনে প্রতিবছরই বাংলাদেশের আলাদা গুরুত্ব থাকে বাংলাদেশ থেকে কারা যান, কতজন যান, তারা কি করেন- এই আলোচনা দেশের মিডিয়ায় প্রতিবছরই কমবেশি হয় ওয়ারশতে থাকাকালীন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে যেভাবে দেখলাম, তার কিছু বিষয় সাপ্তাহিকের পাঠকদের জানাতে চাইছি . বছরও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য সংখ্যা একশজনের উপরে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি লোক বাংলাদেশ থেকেই যায় প্রায় কারণ ছাড়া এতবড় প্রতিনিধি দল প্রতিবছর ভ্রমণ করে . বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুতিনজন সদস্য আছেন, তুলনামূলকভাবে তাদের বয়স কম, সমঝোতাকারী হিসেবে তারা উদ্যমী কিন্তু প্রতিনিধি দলে তাদের গুরুত্ব নেই তাদের নিজেদের অর্থ যোগাড় করে প্রতিনিধি দলের অংশীদার হতে হয় . প্রতিনিধি দলে যাদের অনেক নামডাক, তুলনামূলকভাবে তাদের বয়স বেশি, উদ্যোগ কম দেশের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন আছে, তারাই সবসময় গুরুত্ব পেয়ে থাকে এবারও সেই চিত্রই দেখা গেল . অন্যান্য বার . কাজী খলীকুজ্জমান প্রতিনিধি দলের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন মোটামুটিভাবে দলের ওপর তার একটি নিয়ন্ত্রণ থাকে দলনেতা বন পরিবেশমন্ত্রী . হাছান মাহমুদ শেষ দিকে উপস্থিত থাকতেন মন্ত্রীর উপস্থিতিতে দল চাঙ্গা এবং গোছানো থাকত বছর . খলীকুজ্জমান মূল সমঝোতার আলোচনা শুরু হওয়ার আগে দেশে ফিরে আসেন রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে মন্ত্রী শেষ পর্যন্ত যাননি যার প্রভাব পড়েছে প্রতিনিধি দলে বিস্ময়কর রকমের সমন্বয়হীন এবং অগোছাল ছিল এবারের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল . সমন্বয়হীনতা এবং দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা না থাকা কয়েকটি প্রসঙ্গ বলছি- . বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টায় একটি সমন্বয় সভা করে সমঝোতাকারীরা কি করলেন, কি দেখলেন, অন্যান্য দেশের অবস্থান কি- প্রভৃতি বিষয় অবহিত করেন এই সভায় সভায় দেখা গেল মূল সমঝোতাকারীদের তিন চার জন উপস্থিত নেই . সমন্বয় সভা শেষ জানতে চাইলাম, বাংলাদেশের একটি সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল আগামীকাল সেটার কি অবস্থা, হবে কি না? বন পরিবেশ সচিব বললেন, এই সংবাদ সম্মেলন কবে, সবাই ভুলে গেছেন... অনেক কাগজপত্র ঘেঁটে দুতিন মিনিট সময় নিয়ে জুনিয়র আমলাদের একজন বললেন আগামীকাল সংবাদ সম্মেলন কোথায়, কোন ফ্লোরে, রুম নাম্বার কত- সেই তথ্য জানাতে আরও দুমিনিট সময় নিলেন কয়টায়? আবারও কাগজপত্র ঘেঁটে আরও কিছুটা সময় নিয়ে বললেন, বিকেল তিনটায় . যারা পড়ছেন, তাদের অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে! হওয়ারই কথা সেখানে আমি ছাড়াও প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম, জনকণ্ঠের কাওসার রহমান, ইত্তেফাকের রফিকুল বাশার উপস্থিত ছিলেন . আরেকটি অনুষ্ঠানে সমঝোতাকারী . আইনুন নিশাতের কাছে একজন জানতে চাইলেন, এই ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান কি? অত্যন্ত রূঢ়ভাবে জবাব দিলেন . নিশাত বললেন, এটা আপনার জানা থাকার কথা অথচ দেশ থেকে যাওয়ার আগে এবং ওয়ারশতে গিয়ে কোন ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান কি- বিষয়ক কোনো আলোচনা করা হয়নি ভারতসহ অন্য দেশ তাদের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের এমন কি সাংবাদিকদেরও জানিয়ে দেয়া হয়, কোন ইস্যুতে দেশের কি অবস্থান ব্যতিক্রম বাংলাদেশ . অস্ট্রেলিয়ার আপত্তিকর অবস্থান এবং আচরণের কারণেলস অ্যান্ড ড্যামেজইস্যুতে যখন কোনো অগ্রগতি হচ্ছিল না, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্যে ক্ষতিকর একটি অবস্থানের দিকে নিয়ে যেতে চাইছিল অস্ট্রেলিয়া, সেই সময় এলডিসি, জি-৭৭ সহ ১৪০টি দেশ (বাংলাদেশসহ) সিদ্ধান্ত নেয় ওয়াকআউটের ওয়াকআউট করা হয় ভোর রাত ৪টার সময় ওয়াকআউটের এই কাজটি চমৎকারভাবে সম্পন্ন করে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ ওয়াকআউটের আগে বিষয়টি মৌখিকভাবে ইইউকে জানানো হয় ইইউ গ্রিন সিগন্যালের ভিত্তিতে ওয়াকআউট করা হয় মুহূর্তে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে ওয়াকআউটের সংবাদ চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া মূলত এটাই ছিল উদ্দেশ্য চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া আবার আলোচনা শুরু করে . ওয়াকআউট করা হয় ভোর চারটায় বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলন ছিল বিকেল তিনটায় স্বাভাবিকভাবেই সংবাদ সম্মেলনে ওয়াকআউটের বিষয়টি গুরুত্ব পায় দেশ বিদেশের সবাইকে বিস্মিত করে দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে . আইনুন নিশাত বলেন, না বাংলাদেশ ঠিক ওয়াকআউট করেনি দেশ বিদেশের সংবাদকর্মী থেকে শুরু করে সবাই একে অপরের দিকে তাকাতে থাকেন বাংলাদেশ দলের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতাকারী কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশ ওয়াকআউট করেছে একই সংবাদ সম্মেলনে দুই সমঝোতাকারীর দুই রকম বক্তব্য! পরস্পরবিরোধী বক্তব্য!! . পরে জানা গেল সারারাত ধরে চলা ওয়াকআউট পর্বের এই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন না . আইনুন নিশাত উপস্থিত ছিলেন কামরুল ইসলাম চৌধুরী যদি কামরুল ইসলাম চৌধুরী তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান পরিষ্কার না করতেন, তাহলে অন্যান্য দেশের কাছে প্রশ্নের মুখে পড়ত বাংলাদেশ বাংলাদেশকে সেদিন এই বিব্রতকর অবস্থা থেকে রক্ষা করেছেন কামরুল ইসলাম চৌধুরী . যিনি উপস্থিত ছিলেন না, তিনি বাংলাদেশের অবস্থান বিরোধী বক্তব্য রাখলেন এটা কি না জেনে, না বুঝে, নাকি ইচ্ছেকৃত? . আইনুন নিশাতের অতীত কি বলে? কোপেনহেগেনে দেখা গেছে বিশ্বব্যাংক ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান বিরোধী বক্তব্য দিয়ে আলোচিত হয়েছেন ভেনিজুয়েলাসহ ল্যাটিন আমেরিকার অন্যান্য দেশ সেদিন প্রকাশ্যে বাংলাদেশকে দালাল হিসেবে সম্বোধন করেছে সুতরাং . আইনুন নিশাতের এমন বক্তব্য না জেনে না বুঝে -এটা ভাবার কোনো কারণ নেই তার অবস্থানে অধিকাংশ সময় গুরুত্ব পেয়ে থাকে দাতা সংস্থা, বাংলাদেশ নয় অতীতে দেখা গেছে তিনি একই সময়ে সরকারি কমিটির সদস্য এবং এশিয়া এনার্জির কনসালট্যান্ট বিশ্ব ব্যাংকের কনসালট্যান্স হিসেবে টিপাইমুখ বাঁধের উপকারিতার কথা বলেছেন কিছুদিন পরে আবার টিপাইমুখ বাঁধের ক্ষতির কথা বলেছেন . এলডিসির চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের সামনে এলডিসির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন কামরুল ইসলাম চৌধুরী এবং জুনিয়র আমলা মঞ্জুরুল হান্নান এই দুজনের একজন চেয়ারম্যান হতে পারতেন কিন্তু সিনিয়ররা তা মানবেন কেন! সুতরাং চেয়ারম্যান হওয়ারই দরকার নেই বাংলাদেশের!! পদটি ছেড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ!!! . বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের কিছুটা চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করলাম বোঝা গেল বাংলাদেশ দল কতটা অগোছাল এবং সমন্বয়হীন স্পষ্ট হলো কোনো কোনো সদস্যের হীনম্মন্যতা এবং দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা না থাকার বিষয়টিও প্রশ্ন আসবে, বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল যদি অগোছাল, সমন্বয়হীন না হতো, তাহলে কি প্রাপ্তি অনেক বেশি হতো না, তেমন কিছু হতো না সম্মেলন যে পরিণতি পেয়েছে, তাই পেত কিন্তু বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়ত না, দুএকটি ক্ষেত্রে হাস্যকর অবস্থায় পড়ত না সবচেয়ে বড় কথা, দেশের অর্থ ব্যয় করে এত বড় প্রতিনিধি দলের ভ্রমণে যাওয়ার কোনো দরকার নেই দেশের চেয়ে দাতা সংস্থার স্বার্থ যাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তাদের প্রতিনিধি দলের সদস্য করাটাও অনুচিত তাদের পরিচিতিতে যত যোগ্যতাই থাকুক না কেন।